স্বদেশ ডেস্ক:
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সরকারের আজ্ঞাবাহী দাস। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন চান না। তিনি এমন একজন ব্যক্তি, এমন একজন অনুগত সরকারের, উনি বলেছিলেন, দলগুলো না চাইলে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। তারপরও ইভিএম ব্যবহার করছেন। কারণ শেখ হাসিনা যেটা চায় সেটাই তিনি করবেন। উনি হলেন আজ্ঞাবাহী দাসানুদাস। এই যে গণতন্ত্র হত্যার ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচনকে জলাঞ্জলি দিয়ে, তার প্রধান নায়ক এই সিইসি কেএম নূরুল হুদা। আজ শুক্রবার সকালে এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত পথসভায় রিজভী এসব কথা বলেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে এই মিছিল হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু করে কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে ফের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। মিছিলে অন্যদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, সদস্য সচিব মজিবুর রহমান, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, যুগ্ম আহবায়ক গোলাপ মঞ্জুর, জে এম আনিসুর রহমান, হাজি ফিরোজ কিবরিয়া, রেজাউল করিম রানা, মৎস্যজীবী দলের যুগ্ম আহবায়ক ওমর ফারুক পাটোয়ারী, জহিরুল ইসলাম বাশার, হান্নান, কবির মাষ্টার, ওয়াজেদ আলী, তাঁতী দল সদস্য তাজুল ইসলাম, মৎস্যজীবী সদস্য তানভীর আহমেদ, ছাত্রদল নেতা মামুন হোসেন ভূঁইয়া, রাজু আহমদ, আখতার আহসান দুলাল, রেজাউল করিম রাজু, আলমগীর কবির, নাসির হোসেন, আকরাম আহমেদ, রতন চিশতী, ফিরোজ মাহমুদ সহ শতাধিক নেতাকর্মী।
পথসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রিজভী বলেন, সিইসি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন রাতের আঁধারে করার পর এবার ইভিএম দিয়ে ভোট লুটের নতুন আরেকটি বায়োস্কোপ দেখাবেন বলে মনে করছে জনগণ। আর এজন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা নিজের বিবেক বিসর্জন দিয়ে আওয়ামী বিবেক দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোবাঞ্ছা পূরণেই কাজ করছেন বলে জনগণ মনে করে। নির্বাচন কমিশন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন চাইতো তাহলে প্রতিদিন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী হামলা এবং পুলিশ কর্তৃক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হলেও নির্বাচন কমিশন যেন সবকিছু দেখেও উদাসীন থাকতো না। এক্ষেত্রে কমিশনের নির্বিকার ভূমিকায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন ধ্বংস হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সিইসির অধীনে এ পর্যন্ত যতোগুলো নির্বাচন হয়েছে সেগুলোতে শুধু একতরফা নির্বাচন, ভোট লুট, রাতের আঁধারে ব্যালটে সীল মারাই শুধু নয়, সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম ও তান্ডবের কথা দেশের মানুষ কোনদিন বিস্মৃত হবে না। বুধবার ইসলামপুরে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দক্ষিণে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুল হাই এর নেতৃত্বে যুবদল নেতা সোহেল আহমেদসহ নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ গণসংযোগকালে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র হামলার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এতে সুষ্পষ্টভাবে প্রমানিত হয়-সিইসি কে এম নুরুল হুদাসহ নির্বাচন কমিশন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও ভোট জালিয়াতি করতে বদ্ধপরিকর। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট কারচুপি, সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র দখলসহ সরকারের সকল অপকর্ম রুখে দেয়ার জন্য আমি ঢাকাবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
রিজভী বলেন, সিইসি কথা অনেক ভালো ভালো বলেন… বিধি লঙ্ঘন, অমুক করা, তমুক করা- এসব কথা বলবেন। তারপরও আপনি দেখবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ধারাবাহিকভাবে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করবে সেই দিকটায় তার চোখ অন্ধ হয়ে যায়, সেই চোখটা তার খোলা থাকে না।
তিনি বলেন, ইভিএম দিয়ে ডিজিটাল ভোট ডাকাতির মহড়া হল গত ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-৮ আসন ও হাইমচর উপজেলা নির্বাচনের ভোটে। ওটা ছিল প্রস্তুতি ম্যাচ। সেখানে প্রমাণিত হয়েছে ভোটার ছাড়াই ইভিএমে নৌকা প্রার্থীদের কিভাবে পাস করানো যায়। আমরা মনে করি ইভিএম হচ্ছে গত ২৯ ডিসেম্বর মধ্য রাতে নির্বাচনের মতো ভোট ডাকাতির আরেকটি কৌশল। এটা হচ্ছে ভেল্কিবাজীর মেশিন, ভোট লুটের মেশিন।
রিজভী বলেন, আসন্ন ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনও চট্টগ্রামের মতো দখলের নীলনকশার প্রস্তুতি কিনা তা নিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। এখন সরকারের নতুন নাটক ও বায়োস্কোপ দেখার অপেক্ষায় মানুষ। কেননা ঢাকাতেও সন্ত্রাসী কার্য্ক্রম শুরু হয়েছে। প্রচারণার চলার মধ্যে গ্রেপ্তার করবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এখন গ্রেপ্তার চলছে, অভিযানও চলছে, আক্রমণ চলছে, হামলা চলছে এবং হামলার মাধ্যমে একটা ভয়ভীতির পরিবেশ তারা সৃষ্টি করেছে।
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, জনগণের প্রাণাধিক প্রিয় বেগম খালেদা জিয়ার প্রাণনাশের উদ্দেশে প্রায় দুই বছর ধরে বিনা অপরাধে বন্দী রাখা হয়েছে। বিনা চিকিৎসায় তাকে পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে। ৭৫ বছর বয়স্ক দেশনেত্রীর জীবন প্রতি মূহুর্তে শংকার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের মদদে তার গুরুতর অসুস্থতা গোপন করা হচ্ছে। তিনি এখন কি অবস্থায় আছেন তা কাওকে জানতে দেয়া হচ্ছে না। গণতন্ত্রের পুন:প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ গণতন্ত্রের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতায় তিনি কি বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে আছেন সেটি নিয়ে দেশবাসী উৎকন্ঠিত। তাঁর সাথে স্বজনদের দেখা সাক্ষাত করতে দেয়া হচ্ছে না। তার শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী ও পাতি নেতারাও কুৎসিত ‘ডার্ক হিউমার’ করে যাচ্ছেন। পিজি হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড তার স্বাস্থ্য সম্বন্ধে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে তার বর্তমান অবস্থায় এডভান্স চিকিৎসা দরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। প্রতিহিংসার পথ পরিহার করে অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে।